সর্বশেষ

'মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার মিশনে অংশ নেয় ১৭-১৮ জন'

প্রকাশ :


২৪খবরবিডি: 'ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) কোর্টের মূল ফটকের সামনে থেকে আনসার আল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় সংগঠনটির ১৭-১৮ জন সদস্য অংশ নেয়। ছিনিয়ে নেওয়ার মিশনে অংশ নেওয়া জঙ্গিদের মধ্যে ৫-৬ জন জঙ্গি মোটরসাইকেল করে আসে। আর বাকি ১০-১২ জঙ্গি আদালতে আশপাশে অবস্থান নেয়।'
 

'সম্পূর্ণ মিশনটি আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়ার (৪০) দিক নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় ঘটে।রোববার (২০ নভেম্বর) রাতে এ ঘটনায় এজাহারনামীয় ২০ জনকে ও ২১ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) প্রসিকিউশনের পুলিশ পরিদর্শক জুলহাস উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার এজাহারে তিনি এসব তথ্য জানান। মামলার এজাহারে পরিদর্শক জুলহাস অভিযোগ করে বলেন, আজ সিএমএম কোর্ট ভবনের সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালে ২০১৬ সালে ডিএমপির মোহাম্মদপুর থানায় হওয়া সন্ত্রাস বিরোধী আইনের একটি মামলায় জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের ১৪ আসামির হাজিরের দিন ধার্য ছিল। এই ১৪ জঙ্গিরা হলেন—শাহিন আলম ওরফে কামাল (২২), শাহ আলম ওরফে সালাউদ্দিন (২৬), বিএম মজিবুর রহমান (২৭), মো. সুমন হোসেন পাটোয়ারী ওরফে সাকিব ওরফে সিহাব ওরফে সাইফুল (২০), মইনুল হাসান শামিম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান (২৪), খায়রুল ইসলাম ওরফে জামিল ওরফে রিফাত ওরফে ফাহিম ওরফে জিসান (২৪), মো আবু সিদ্দিক সোহেল (৩৪), মোজাম্মেল হোসেন ওরফে সাইমন (২৫), মো.আরাফত রহমান (২৪), মো. শেখ আব্দুল্লাহ (২৭), মো. আ. সবুর ওরফে রাজু ওরফে সাদ ওরফে সুজন (২১), মো. রশিদুন্নবী ভূইঁয়া (২৬), মো. ঈদী আমিন (২৭) ও মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফি (২৪)। এদের মধ্যে মো. ঈদী আমিন ও মেহেদী হাসান অমি জামিনে রয়েছেন। তিনি বলেন, আজ সকাল আনুমানিক ৮টা ৫ মিনিটে কাশিমপুর কারাগার থেকে যথাক্রমে ১-১২ জন আসামিকে প্রিজন ভ্যানে করে সিএমএম কোর্টের হাজতখানায় নিয়ে আসা হয়। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে ডিএমপির ঢাকার প্রসিকিউশন বিভাগের পুলিশ সদস্যরা ১২ আসামিকে হাজিরার জন্য সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালে নিয়ে যান। মামলার শুনানি শেষে জামিনে থাকা আসামি ঈদী আমিন ও মেহেদী হাসন অমিকে আদালত থেকে বের হয়ে যান। ট্রাইব্যুনাল থেকে মইনুল হাসান শামিম, মো. আবু সিদ্দিক সোহেল, মো. আরাফত রহমান, মো. আ. সবুরকে হাজতখানার নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা। হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার সময় বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে সিএমএম কোর্টের মূল ফটকের সামনে পোঁছালে দুইটি মোটরসাইকেলে আসা ৫-৬ জঙ্গিসহ আরও ১০-১২ জন পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালায়।'


'জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে তারা এই হামলা চালায়। তিনি আরও বলেন, এই সন্ত্রাসী কাজে পুলিশ সদস্যরা বাধা দিলে এক জঙ্গি লোহারজাতীয় কিছু একটা দিয়ে পুলিশ সদস্য মো. আজাদকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার মাথায় আঘাত করে। কিন্তু আজাদ পেছনে সরে যাওয়ায় তার মুখে ও নাকে আঘাত লাগে। এতে তার মুখ ও নাক গুরুতরভাবে জখম হয়। পরে পুলিশ সদস্য আজাদের চিৎকারে আশেপাশে থাকা কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা মূল ফটকের দিকে আসলে জঙ্গিরা তাদের লক্ষ্য করে পিপার স্প্রে নিক্ষেপ করে। এতে

'মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার মিশনে অংশ নেয় ১৭-১৮ জন'

ফটকের নিরাপত্তারক্ষী মো. তারেক জিয়া (২১) মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এই সুযোগে অজ্ঞাত জঙ্গিরা আনসার আল ইসলামের সদস্য মইনুল হাসান শামিম ও মো. আবু সিদ্দিক সোহেলকে ছিনিয়ে নিয়ে মোটরসাইকেল করে পালিয়ে যায়। এ সময় অপর দুই জঙ্গি মো. আরাফত রহমান ও মো. আ. সবুর আহত পুলিশ সদস্যদের কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের আটক করা হয়। এছাড়া শামিম ও সিদ্দিক মোটরসাইকেল করে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদেরকে পুলিশ ধাওয়া করে। এসময় তারা মোটরসাইকেলটি রেখে পালিয়ে যান। পরে সেই মোটরসাইকেলটিকে জব্দ করা হয়েছে।'
 

'পুলিশের হেফাজতে থাকা দুই জঙ্গি মো. আরাফত রহমান ও মো. আ. সবুরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার নেতা মেজর জিয়ার দিক নির্দেশনা ও পরিকল্পনা মোতাবেক সংগঠনটির সদস্য আয়মান ওরফে মশিউর রহমান (৩৭), সাব্বিরুল হক চৌধুরী ওরফে আকাশ (২৪), তানভীর ওরফে সামশেদ মিয়া, রিয়াজুল ইসলাম ওরফে রিয়াজ (২৬) ওরফে মো.ওমর ফারুক পুলিশের ওপর হামলা করে তাদের ছিনিয়ে নিয়ে যাবে—এমনটি তারা আগে থেকেই জানতেন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আনসার আল ইসলামের ৫-৬ জন জঙ্গি দুইটি মোটরসাইকেলে করে এবং আরও ১০-১২ জন জঙ্গি আদালতের আশপাশে অবস্থান নেয়। পরে সুযোগ বুঝে হামলা করে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এজাহারে তিনি আরও উল্লেখ করেন, পলাতক আসামিরা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন, রাজনীতিবিদ, ব্লগার, লেখক ও প্রকাশকদের হত্যার মিশন বাস্তবায়নের জন্য জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে। এছাড়া ছিনতাই মিশনে জঙ্গিদের ফেলে যাওয়া একটি নীল ও কালো রঙের হোন্ডা মোটরসাইকেল, ১৪.৫ ইঞ্চি লোহা কাটার এবং একটি সাদা রঙের পলিথিনে রাখা মোট বিভিন্ন সাইজের ৬৯ পিস লোহার নাট-বল্টু (যার গায়ে লিখা এমকো ফ্লো ৮০ ডব্লিউ জি সালফার) জব্দ করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলের পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, পুলিশের ওপর আক্রমণ করে দুইজন জঙ্গিকে অন্য জঙ্গিরা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় আমরা একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের ও যারা গ্রেপ্তার আছে তাদেরকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন, নিরাপত্তার বিষয়সহ যেসব ত্রুটি ছিল তা বের করার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করতে আমাদের কাজ শুরু হয়ে গেছে। এছাড়া দুই জঙ্গিকে কারা ছিনিয়ে নিতে এসেছিল তাদের সম্পর্কে তথ্য পেয়েছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা আশা করছি যারা জঙ্গিদের ছিনিয়ে নিয়ে গেছে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। এর আগে রোববার বিকেলে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আজ কোর্টে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। আজ কয়েকজন জঙ্গি সদস্যের হাজিরা ছিল। কোর্ট থেকে হাজতখানায় নেয়ার পথে অন্য সহযোগীদের সহযোগিতায় দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।'


'ছিনিয়ে নেওয়া দুই সদস্যই আনসার আল ইসলামের সদস্য। তারা হলেন—মইনুল হাসান শামিম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব। তারা দুজনই জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি। সাকিবুর অভিজিৎ হত্যা মামলারও মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি। আজ তাদের মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা অন্য একটি মামলায় শুনানির জন্য আদালতে তোলা হয়েছিল। তিনি বলেন, ঘটনার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সিটিটিসি অভিযান পরিচালনা করছে। আমরা আশা করছি তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো। আইনজীবী ও পিপিও বলেছেন, আদালতে এ ধরনের মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামিদের শুনানির সময় তাদের হাজির করতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা উচিত ছিল। এ প্রসঙ্গে সিটিটিসি প্রধান বলেন, আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। সেটা ভিন্ন ইস্যু। সেটা কোর্টে দেখার জন্য আলাদা ইউনিট কাজ করছে। তবে কীভাবে জঙ্গিরা পালিয়ে গেল, ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারা ছিনিয়ে নিয়ে গেল, তাদের প্রত্যেককে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা শুনেছি আদালতের গেইটে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের চোখে স্প্রে করে দুইজন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে অন্য জঙ্গিরা। চারজন জঙ্গি মোটরসাইকেল করে আদালত চত্বরে এসে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। চোখে স্প্রে করার কারণে দায়িত্বরতরা কিছু দেখতে পারেননি। তিনি বলেন, আমরা ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়েছি। গ্রেফতারদের ধরতে আমাদের ডিবির প্রতিটি টিম কাজ করছে। আশা করছি তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। বর্তমানে জঙ্গিরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। এবার তারা নতুন একটি কৌশল নিয়েছে, স্প্রে ছিটিয়ে জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া।'

Share

আরো খবর


সর্বাধিক পঠিত